মঙ্গলবার, ৮ জুলাই, ২০২৫

যারা জুলাইয়ে জীবন দিয়েছিলে

 আজ যখন টিএসসির পথ হাঁটতে ছিলাম,

শূন্য শূন্য লাগতে ছিলো!

অথচ এই টিএসসির মোড়ে কত স্বপ্ন উড়ে,

প্রেম হয়, বন্ধুত্ব হয়

এই টিএসসির মোড়ে গল্প হয় আগামী বাংলাদেশ নিয়ে,

সুন্দর একটি দেশ গড়ার,

ঠিক আমার মায়ের আঁচলের মতো—

যেখানে হাসবে কোটি বাঙালি, হাসবে মায়ের শিশুরা।

অথচ আজ হাসি নেই, বৃক্ষের ছায়া নেই,

পাখির ডাকাডাকি নেই,

আছে শুধু শূন্য পথ, শূন্য চারপাশ!

হায় 'আছে টিএসসির মোড় জুড়ে

নীল পোশাক পরিধানকারীরা—

এবং আরও আছে মোড় জুড়ে জুড়ে

অস্ত্র হাতে কিছু বাহিনী,

শুনলাম 'তাদের নাম নিতেও আজ লজ্জাবোধ করে

সোনার বাংলার মানুষেরা!

এই শাহবাগের পথ আজ আমাকে চিনেও চিনে না,

এই টিএসসির পথ আজ আমাকে চিনেও চিনে  না,

সেদিনের সেই চেনা পথগুলো—

আজ আমাকে বলে কে তুমি?

ঐ পথগুলো শুধু প্রিয় ছাত্র-ছাত্রী বলিয়া বলিয়া—

হাহাকার করিলো খোদা!

আর বলিলো কোথায় তোমরা?

আমিও খুঁজলাম বই বিক্রেতা হাবিব চাচাকে,

সে নেই, বইয়ের গন্ধ নেই, চায়ের কাপে ঝড় নেই,

অবশেষে মাথা নিচু করে কাঁদলাম—

আর বললাম এই কি আমার সোনার বাংলা,

এই কি আমার স্বাধীন দেশ!

আলো আছে অথচ দিনের আলো আজ কতটা অন্ধকার,

সবাই শুধু মুক্তি চায়, শান্তি চায়, স্বাধীনতা চায়।

আলো হতে হবে এমন 'রাতের আঁধার হবে দিন,

মুক্তি হতে হবে এমন 'মুক্ত আকাশে পাখির মতো উড়ি,

শান্তি হতে হবে এমন 'মায়ের বুকের মধ্যে মাথা রাখি,

স্বাধীনতা হতে হবে এমন 'মন খুলে কথা বলি,

স্বাধীনতা হতে হবে এমন 'আমার বাবার গান,

স্বাধীনতা হতে হবে এমন 'আমার বোনের গাঁথা মালা,

স্বাধীনতা হতে হবে এমন 'আমার ভাইয়ের—

দৌড়ে বেড়ানো ঐ সবুজ শ্যামল মাঠে খেলা,

স্বাধীনতা হতে হবে এমন 'মুক্ত খাতায় লিখি।

অথচ আমি দিন দেখি আলো দেখি না,

অথচ আমি আকাশ দেখি উড়তে পারি না,

অথচ আমি মায়ের বুকে মাথা রেখে বলতে পারি না—

মা, ও-মা, মাগো 'তোমার খোকা তোমাকে ভালোবাসি,

অথচ আমি বলতে পারি না মন খুলে কথা—

হায় 'মন খুলে কথা বললেই জেল হাজত,

অথচ আমার বাবাকে গাইতে দেখি না গান,

অথচ আমার বোনকে গাঁথতে দেখি না মালা,

অথচ আমি আমার ভাইকে দৌড়েতে দেখি না—

ঐ সবুজ শ্যামল মাঠে,

অথচ আমি লিখতেই পারি না অধিকারের কথা,

লিখলেই কপালের মাঝ বরাবর বন্দুকের নল—

এসে বলে 'মর তুই, মইরা যায়,

তোর বেঁচে থাকার অধিকার নাই!

আমি টের পাচ্ছি কেনো শূন্য শূন্য লাগে,

আমি বুঝলাম কেনো টিএসসির মোড়ে প্রেম নেই,

কেনো বন্ধুত্ব হয় না, সুন্দর দেশ গড়ার গল্প হয় না,

কেনো বাঙালিরা আজ হাসে না,

কেনো হাসে না মায়ের শিশুরা,

আমি টের পেয়েছি কেনো হাসি নেই,

আমি বুঝলাম কেনো বৃক্ষের ছায়া নেই,

পাখির ডাকাডাকি নেই,

আমি বুঝলাম কেনো চায়ের কাপে ঝড় নেই,

কেনো বই বিক্রেতা হাবিব চাচা নেই,

শাহবাগে বইয়ের গন্ধ নেই,

অবশেষে মাথা নিচু করে কাঁদলাম,

কারণ স্বাধীনতা নেই,

আমাদের স্বাধীনতা শেষ!

এখন সাদা কাপড় মোড়ানো লাশ,

এখন মৃত মানুষের চিৎকার,

এখন পিতার শোক পুত্রের জন্য,

এখন মায়ের শোক কন্যার জন্য,

আবার কাঁদছে ভাইয়ের জন্য বোন—

কিংবা বোনের জন্য কাঁদছে ভাই।

অসহায় আমি, অসহায় জন্মভূমি,

অসহায় জাতি, অসহায় বাঙালি,

কেনো? কেনো? কেনো? —এর উত্তর কি?

আছে উত্তর মন্ত্রী সাহেব?

—এর উত্তর কি?

আছে উত্তর সাংবাদিক সাহেব?

কেনো? কেনো? কেনো?

রাজপথ শূন্য শূন্য লাগে!

অথচ ঐ টিএসসির মোড়ে কত স্বপ্ন উড়ে,

প্রেম হয়, বন্ধুত্ব হয়

এই টিএসসির মোড়ে গল্প হয় আগামী বাংলাদেশ নিয়ে,

সুন্দর একটি দেশ গড়ার,

ঠিক আমার মায়ের আঁচলের মতো—

যেখানে হাসবে কোটি বাঙালি, হাসবে মায়ের শিশুরা।

আজ মাথা নিচু করে জায়নামাজে বসে—

কাঁদে কেউ কেউ,

আবার কেউ কেউ মোনাজাতে অভিযোগ তুলে—

রাব্বুল আলামিন 'বিচার করিও তুমি,

বিচার করিও জগৎ স্বামী।

এখন আর নেই সে কোলাহল,

মানুষে মানুষে আনন্দ গান কবিতার আসর,

একুশে ফেব্রুয়ারির দিনে আমি এই পথে হেঁটেছি,

পহেলা বৈশাখের দিনে আমি এই পথে নেচেছি,

বইমেলার কথা কার না আছে মনে—

বইয়ের গন্ধে দুলতো সবুজ বৃক্ষ আনন্দে,

এখন শাহবাগ, এখন টিএসসি—

এখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শূন্য শূন্য লাগে!

এতোটাই শূন্য লাগে 'থেকেও যেনো কিছু নেই—

আলো নেই, অধিকার নেই, মুক্ত বাতাস নেই।

কত লাশের কথা শুনি, শুনি রক্তের কথা

শুনি মায়ের কান্না, শুনি পিতার কান্না

শুধু শুনি না গনতন্ত্র আছে এই দেশে

আছে আমাদের স্বাধীনতা!

আর কত বলা যায়, লেখা যায়

অধিকার চাই বলিয়া বলিয়া রাজপথে—

নেমে চাইতে পারি আমাদের দাবি,

স্বাধীনতা যেনো এক পরাধীন নাগরিক!

ব্যস থেমে যাচ্ছি, আর লিখছি না কবিতা

বলছি না আর আমার না বলা কথাগুলো,

যতদিন বেঁচে আছি বোবার মতো থাকবো,

অন্ধ হয়ে এই দেশে হাঁটবো,

কানে শুনেও বলবো শুনি নাই কিছু,

দেখি নাই কিছু—

কারণ আমি তো বোবা,

শুনেছি বোবার কোনো শত্রু নেই!

ওরা গুলি করে মেরে ফেললো আগামীর ভবিষ্যৎ

হত্যার মধ্যে দিয়ে জাতির হলো ভয়ংকর ক্ষতি,

অথচ এই নিয়ে কথা বলার কেউ নেই

আছে শুধু বন্দুকের নল—

আর এই নল কপালে এসে ঠেকে,

হায় আপসোস হয় জাতির করুণ দশা আজ!

মিথ্যে মামলা, হয়রানির শিকার, জেল হাজত

মুক্তি নেই, শান্তি নেই, অধিকার নেই,

আছে শুধু মৃত্যুদন্ড, ভয় দেখানো, গুম, খুন—

আর হত্যার হুমকি! কি অদ্ভুত আমার দেশ।

পা চাটা কবিরা কখনো 'নজরুল, সুকান্ত হতে পারে না!

এই ঘুমন্ত জাতিকে নজরুল পড়তে বলো

বলো পড়তে সুকান্ত, কিংবা পড়ুক নবারুণ ভট্টাচার্যকে,

তখন জানবে তারা কবি কাকে বলে

প্রতিবাদ কাকে বলে।

ঘুমন্ত জাতি কখনো সকাল দেখতে পায় না,

সকাল দেখতে হলে জাগ্রত থাকতে হয়

আলোর সন্ধান করতে হয়,

আঁধার দেখে ঘুমিয়ে গেলে দিনের আলোও তোমার কাছে অন্ধকার!

আমাদের আলো আসবে,

ভালোবাসার বন্ধনে বাঁধা থাকবে এই কপালে পতাকা

ঐ আকাশে উড়বে লাল সবুজের স্বাধীন পতাকা,

সেদিন আমরা সবাই দেখবো পতাকার হাসি

সে মুক্ত আকাশে উড়ছে,

আর বলছে জয় হয়েছে তোমাদের

যারা জুলাইয়ে জীবন দিয়েছিলে,

তোমাদের এই দুই হাজার চব্বিশ ভুলবে না জাতি

অক্ষয় অমর তোমরা।

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

অসভ্য

 কেমন বাজে প্রেমিক আমি রাত দিন তোমাকে বিরক্ত করি তোমার সাথে যখন তখন কথা বলা শুরু করি, আমার এই পাগলামি দেখে তোমার ভদ্র সমাজ আমাকে অসভ্য উপাধি...